সংকট এড়াতে প্রয়োজন দলগুলোর ঐক্য ধরে রাখা

- আপডেট সময় ১২:১৬:২৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৩৩ বার পড়া হয়েছে
দেশ যেন দীর্ঘমেয়াদি সংকটে না পড়ে, সে জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্য ধরে রেখে এগোতে হবে। এই মন্তব্য এসেছে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায়। আলোচকেরা বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাস হতে চললেও সংস্কার প্রক্রিয়ায় যে পরিসরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা প্রয়োজন ছিল, তা দেখা যাচ্ছে না।
আজ বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ‘সমঝোতা ব্যতীত সংবিধান সংস্কার কি সম্ভব? সমঝোতা সংলাপ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন। ‘রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন’ এবং ‘জুলাই ৩৬ ফোরাম-অপরাজেয় বাংলা’ এই আলোচনাসভার আয়োজন করে।
আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, আন্দোলনের প্রধান শক্তি জনগণ। কিন্তু এই জনগণ থেকে যদি কেউ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তাহলে মানুষের মনে ক্ষোভ তৈরি হয়। জনগণকে দীর্ঘদিন ক্ষমতাহীন করে রাখা ঠিক না। সামগ্রিক বাস্তবতায় বিএনপির ৩১ দফার আলোকে সমঝোতা প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে ভাবতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে সমঝোতা ছিল, সেটাকে নতুন করে সংগঠিত করা দরকার।
সংস্কার নিয়ে আলোচনার কোনো উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ করেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম। তিনি বলেন, এখন কতটা সংস্কার দরকার—এ প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কিছু চিন্তা কাজ করছে। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি এই সরকারের ছয় মাস পূর্ণ হবে। এর মধ্যে কিছু কমিশনের বিশেষজ্ঞ মতামত এসেছে। এ ছাড়া বাকি যাঁরা আন্দোলন করেছেন, জীবন দিয়েছেন এবং ভবিষ্যতে যাঁরা দেশ পরিচালনা করবেন, তাঁদের সঙ্গে যে পরিসরে আলোচনা হওয়া দরকার, সে উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
হাসনাত কাইয়ুম উল্লেখ করেন, সংবিধান সংস্কার ও সরকার গঠন দুটোর জন্যই নির্বাচন হতে হবে। দেশ যেন দীর্ঘমেয়াদি সংকটে না পড়ে সে লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে এখন ঐক্য ধরে রেখে এগোতে হবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য বাড়তে থাকলে আওয়ামী লীগের ফিরে আসার সম্ভাবনাও বাড়তে থাকবে বলে মন্তব্য করেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। তিনি বলেন, যে আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদকে বিদায় করা হয়েছে, সেই অর্জন রক্ষা করতে হবে এবং জাতীয় নিরাপত্তা ও গণতন্ত্রের প্রশ্নে ঐক্য ধরে রাখতে হবে। সরকারের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে যেন এটা প্রকাশ না পায় যে তারা বিশেষ কোনো দল বা গোষ্ঠীর প্রতি পক্ষপাত করছে।
এবি পার্টির সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, বিএনপিকে এটা বোঝাতে হবে যে তারা ক্ষমতায় আসবে; কিন্তু তারা যেন হাসিনার মতো না পালায়। ছোট দলগুলোকে যেন তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা না হয়।
আলোচনা সভা অনুষ্ঠানে ‘টেকসই সংস্কারের একমাত্র পথ: রাজনৈতিক সমঝোতা’ শিরোনামে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের মিডিয়া ও প্রচার সমন্বয়ক সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন। প্রবন্ধে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের অপেক্ষায় না থেকে সব রাজনৈতিক দলকে একত্র হয়ে সমঝোতা পরিষদ গঠন করে আলোচনার মাধ্যমে সংবিধান সংস্কার প্রক্রিয়াকে বাস্তবায়নের পথে এগোনো প্রয়োজন। রাজনৈতিক সমঝোতার এই প্রক্রিয়াকে সহজ করতে অন্তর্বর্তী সরকারের ঐক্য কমিশনকে কাজে লাগাতে হবে।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের অর্থবিষয়ক সমন্বয়ক দিদারুল ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের (এনডিএম) মহাসচিব মোমিনুল আমিন, গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান, জুলাই ৩৬ ফোরাম–অপরাজেয় বাংলার আহ্বায়ক এম এ এন শাহীন, নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার।